গর্ভবতী হওয়ার ঠিক কত দিন পর শিশুর হার্টবিট শুনতে পাওয়া যায়?

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ, সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময় একজন নারীর জন্য সবথেকে সংবেদনশীল সময়। এই সময় একটু ভুলের কারণে গর্ভে থাকা বাচ্চার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় আপনি আপনার বাচ্চার সঠিক যত্ন কিভাবে নিবেন সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব এবং অবশ্যই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ এবং বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান হয় সে সকল বিষয়ে আপনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব।

  

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ

চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হৃৎপিণ্ডের সৃষ্টি বা গঠন কার্যক্রম শুরু হয় বাচ্চা কনসিভ করার পঞ্চম সপ্তাহ পড়ে। তবে এ সময় হৃৎপিণ্ড এতটাই ছোট থাকে যে আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনে হার্টবিটের আওয়াজ ধরা পড়ে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ ভালোভাবে প্রকাশ পায় বাচ্চার বয়স যখন আট সপ্তাহে পৌঁছায়। এ সময় গর্ভে থাকা বাচ্চার হৃদপিণ্ডের উপস্থিতি আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনে বোঝা যায়। যখন বাচ্চার বয়স দশ সপ্তাহে পৌঁছায় তখন ডক্টর মেশিনে বাচ্চার হৃৎপিণ্ডের লক্ষণ ধরা পড়ে। তবে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় বাচ্চার বয়স ১২ সপ্তাহ হওয়ার পরে।

বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় বাচ্চার বয়স তখন 12 সপ্তাহে পৌঁছায় এবং প্রাথমিকভাবে হার্টবিটের সৃষ্টি হয় বাচ্চার বয়স যখন পঞ্চম সপ্তাহে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান এবং মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা রয়েছে। তবে এটি সবসময়ই সঠিক হবে এমন কেউ নয়। চিকিৎসকের মতে বাচ্চার হার্টবিট শুরু হওয়ার পরে তার হৃদস্পন্দন যদি ১৪০ BPM এর বেশি হয় তাহলে বাচ্চাটি মেয়ে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং বাচ্চার হৃদস্পন্দন ১৪০ BPM এর কম হয় তবে বাচ্চাটি ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সাধারণভাবে প্রকাশ পায় মূলত অষ্টম থেকে দ্বাদশ সপ্তাহের দিকে। তবে বাচ্চার হার্টবিটের গঠন সৃষ্টি হয় পঞ্চম সপ্তাহে কিন্তু এ সময়ে হৃদপিণ্ড এতটাই ছোট থাকে যে আল্ট্রাসনোগ্রামে বাচ্চার হৃদস্পন্দন ধরা পড়ে না। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় সপ্তম সপ্তাহে স্পন্দন বোঝা যায় কিন্তু সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। অর্থাৎ গর্ভ অবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কমে গেছে এমনটি মনে হতে পারে কিন্তু বাচ্চার হার্টবিট সম্পূর্ণরূপে আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং রক্ত মেশিনে ধরা পড়ে যখন বাচ্চার বয়স ১২ সপ্তাহে পৌঁছায়।

তাই বারো সপ্তাহের পূর্বে বাচ্চার হার্টবিট যদি কম মনে হয় সেক্ষেত্রে আগেই দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই আপনি চাইলে বাচ্চার বয়স ১২ সপ্তাহ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন অথবা আপনার নিজস্ব জিনিস ডাক্তার রয়েছে তার শরণাপন্ন হয়।

বাচ্চার হার্টবিট আসার দোয়া

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সাধারণত সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় বাচ্চার বয়স যখন 12 সপ্তাহে পৌঁছায়। কিন্তু এর আগেও অনেক গর্ভবতী মা আছেন যারা অনেক বেশি ভয় পান। তবে আপনি চাইলে সপ্তম সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখতে পারেন বাচ্চার হার্টবিট ধরা পড়ে কিনা যদি না পড়ে তাহলে আপনি চাইলে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। অথবা আপনি যদি বেশি ভয় পেয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার ডাক্তারের অতি দ্রুত পরামর্শ নিন।

এছাড়া আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন। আল্লাহ তায়ালার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে আপনি যদি কিছু চান নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা আপনাকে ফেরাবেন না। বাচ্চার হার্টবিট আসার দোয়া অথবা আপনি আপনার বাচ্চা সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে যেভাবে দোয়া করতে পারেন।

  • রাব্বি লা-তাযারনী ফারদাও ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিছীন।
এটি সূরা আম্বিয়ার একটি আয়াত এর বাংলা অর্থ হলঃ হে আমার সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিঃসন্তান রেখো না। আর তুমি তো উত্তম ওয়ারিশ।(সূরা আম্বিয়া ২১ঃ৮৯)

  • রাব্বানা-লা-তুঝিগ কূলূবানা-বা'দা ইয হাদাইতানা-ওয়াহাবলানা মিল্লা দুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহা-ব।

এটি সূরা আল ইমরানের একটি আয়াত এর বাংলা অর্থ হলঃ হে আমার সৃষ্টিকর্তা আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটি পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি সকলের প্রার্থনা শ্রবণকারী।

বাচ্চার হার্টবিট না আসলে কি করনীয়

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ প্রকাশ পায় সপ্তম সপ্তাহে। তবে অনেক গর্ভবতী মা আছেন যারা সপ্তম সপ্তাহের বাচ্চার হার্টবিট শুনতে না পারার কারণে অনেক আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একজন গর্ভবতী মা এবং বাবা উভয়ের জন্য সবথেকে আনন্দ এবং উত্তেজনার বিষয় হলো তার শিশুর স্পন্দনের আওয়াজ শোনা। যদি শিশুর স্পন্দনের আওয়াজ পাওয়া যায় তার মানে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় অর্থাৎ বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

বাচ্চার বয়স যখন সপ্তম সপ্তাহে পৌঁছাবে সে সময় আপনি আল্ট্রাসনোগ্রাম করে যদি বাচ্চার হৃদস্পন্দনের আওয়াজ সনাক্ত করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে প্রথমে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বাচ্চার হার্টবিট না আসার অনেকগুলো কারণ রয়েছে এর মধ্যে একটি হলো বাচ্চার হৃৎপিণ্ডের গঠন শুরু হয় পঞ্চম সপ্তাহ থেকে এ সময় বাচ্চার হৃদপিণ্ড এতটাই ছোট থাকে যে আলট্রাসনোগ্রাম ও ডপলার মেশিনে হৃদপিন্ডের আওয়াজ ধরা পড়ে না।

আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মা অনেক মোটা হওয়ার কারণে অর্থাৎ তার পেটে চর্বি জমে যাওয়ার কারণে ডপলার এর সাহায্যে হৃদপিণ্ডের আওয়াজ শনাক্ত করা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আবার পরবর্তী সময়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা। বিশেষ করে ১২ সপ্তাহ পরে বাচ্চার হৃদপিন্ডের আওয়াজ স্পষ্ট ভাবে শোনা যায় তাই প্রথম দিকেই আতঙ্কিত না হয়ে সপ্তম সপ্তাহে আল্টাসনোগ্রাম করে যদি বাচ্চাদের হৃদপিণ্ডের আওয়াজ না পান সেক্ষেত্রে একজন ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করুন।

সপ্তাহ অনুযায়ী বাচ্চার হার্টবিট

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ পায় সপ্তম সপ্তাহ থেকে। সপ্তাহ অনুযায়ী বাচ্চার হার্টবিট এর বিপিএম কম বেশি হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে একটি চার্ট দেখানো হলো সপ্তাহ অনুযায়ী বাচ্চার হার্টবিটের।

সপ্তাহ অনুযায়ী বাচ্চার হার্টবিট
৫ সপ্তাহ 80-103 BPM
৬ সপ্তাহ 103-126 BPM
৭ সপ্তাহ 126-149 BPM
৮ সপ্তাহ 149-172 BPM
৯ সপ্তাহ 155-195 BPM গড়ে ১৭৫
১২ সপ্তাহ 120-180 BPM গড়ে ১৫০
১২সপ্তাহ পরে 12-160 BPM গড়ে ১৪০

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সম্পর্কে আমরা পূর্বে সকল কিছুই জেনেছি। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সবথেকে সংবেদনশীল সময় হচ্ছে গর্ভকালীন সময়। আর তার কাছে সবথেকে উত্তেজনা পূর্ণ বিষয় হলো বাচ্চার প্রথম হৃদপিন্ডের আওয়াজ শোনা। হৃদপিন্ডের আওয়াজ পাওয়ার পরে একজন গর্ভবতী মায়ের সব থেকে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। মায়ের যত্নের ফলে বাচ্চার হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকবে তাই গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজন সঠিক বিশ্রাম ঘুম এবং পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ করা।

সকল তথ্য অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা তাই এখানে ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। তাই লেখক এর মন্তব্য যদি আপনি গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ বুঝতে না পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি দ্রুত আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্বপ্নবোনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url