কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত
কার্যকরী। কচু শাকের উপকারিতা শুধু যে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেই কার্যকরী তাই নয়,
এতে বিদ্যমান চর্বি, শর্করা, খনিজ পদার্থ ও লৌহ উপাদান অন্যান্য সবুজ শাকসবজি
থেকে বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা
এবং শরীরে আয়রনের পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে আজকে কচু শাকের আরো কিছু গুনাগুন জেনে নেয়।
সবজি হিসেবে কচু শাকের গুনাগুন অন্যান্য সবজির তুলনায় অনেক বেশি। প্রিয় পাঠক
আমাদের দেশের শাকসবজিপ্রিয় বেশিরভাগ মানুষের কাছে কচুশাক খুবই জনপ্রিয়
একটি সবজি। সবার পছন্দের এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি,
ক্যালসিয়াম ও আয়রন সহ বিভিন্ন উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে এবং স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত করে। কচু শাক পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত
হওয়ায় এটি পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
কচু শাকের উপকারিতা
কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং প্রোটিন যা আমাদের দেহের বৃদ্ধি
ঘটায় এবং কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কচু শাকের ভিটামিন কোষের পুনর্গঠন
করে থাকে।
কচুশাকে রয়েছে ভিটামিন এ, যা রাতকানা রোগের নিরাময় করতে সহায়তা
করে। এছাড়াও চোখে ছানি পড়ার এবং চোখের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে দৃষ্টি
শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি
করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের রক্তস্বল্পতার প্রধান সমাধান
বেশি পরিমাণে কচু শাক গ্রহণ করা।
যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের পরিপাকতন্ত্রের ত্বরান্বিত এবং খাদ্য হজম
করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কচুর শাক।
কচুর শাকের সবচেয়ে বেশি উপকারিতা রয়েছে এর ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও
ম্যাগানিজ। এ সকল উপাদান আমাদের শরীরের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে এবং শরীরের
হাড়ের গঠন ঠিক রাখে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
কচুর লতি খেলে কি হয়?
কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন যার শরীরের রক্তশূন্যতা দূর
করে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার। এই
উপাদানগুলো হার শক্ত করে। কচুর শাকে আশের পরিমাণ খুব বেশি বলে হজমের সাহায্য
করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াও কচুর সাথে বিদ্যমান ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে
সংক্রামক রোগ থেকে দূরে রাখে।
কচু খেলে গলা চুলকায় কেন?
সাধারণত কচুর কাণ্ডে, মূলে এবং পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামের এক ধরনের
উপাদান রয়েছে। যেটি রাফাইড নামেও পরিচিত। এর আকার আকৃতি গোলাকার হয়ে থাকে এবং
গরন সূচালো। কচুর শাক খাওয়ার সময় যখন গলায় রাফাইড গুলো আটকে যাওয়ার ফলে গলায়
চুলকানি অথবা ব্যথার সৃষ্টি হয়। তবে উচ্চতাপে রাফাইড নষ্ট হয়ে যায়। কিছু
ক্ষেত্রে উচ্চতাপেও এরা বেঁচে থাকে যার ফলে পেটের ভেতরে গিয়ে কিডনিতে পাথরের
সৃষ্টি করে। অনেক কচুতে রাফাইড নামক এই উপাদান থাকেনা সেগুলো কচু নিশ্চিন্তে খেতে
পারেন।
কচু শাক খেলে কি হয়?
কচুর সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি সহ আরো অনেক খনিজ পদার্থ, যা
রাতকানা রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও কচুর শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য,
রাতকানা রোগ, রক্তশূন্যতা ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়।
কচু শাকের অপকারিতা
কচু শাকের উপকারিতা এর ডাটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে যা
শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও কচুর শাকে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান যা রাতকানা রোগ নিরাময় করে। তবে কচু শাকের অপকারিতা
সামান্য পরিমাণে রয়েছে। কচুর শাকে রাফাইড নামক যৌগ থাকে যেটির আকৃতি গোলাকার এবং
গরন সূচালো। কচুর শাক খাওয়ার সময় এই রাফায়ড নামক যৌগ গলায় আটকে যায়। যার ফলে
কচুর শাক খাওয়ার সময় গোলা চুলকায় এবং হালকা ব্যথা অনুভব হয়।
যাদের কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা প্রচুর শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কারণ রাফাইড যৌগ পেটের ভিতরে প্রবেশ করে কিডনিতে পাথর গঠন করে। এজন্যই
যাদের কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা কচুর শাক খাবেন না। বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি একজন
অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়
সাধারণভাবে এলার্জিযুক্ত খাবার সনাক্ত করার নির্দিষ্ট কোন মাধ্যম নেই। তবে আমরা
এমন অনেকগুলো খাবারের সাথে পরিচিত আছে যেগুলো খাবার খাওয়ার ফলে মানবদেহে
এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এটি সম্পূর্ণ আমাদের শরীরের ওপর নির্ভর
করে। এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এমন একটি খাবার হল কচু শাক।
কচুর পাতায় রয়েছে অক্সালেট নামক উপাদান, যেটি আরো বিভিন্ন ধরনের গাছে পাওয়া
যায়। কচুর পাতায় বিদ্যমান অক্সালেট নামক এই উপাদান কিডনিতে পাথর সৃষ্টিতে অবদান
রাখে। তাই যাদের কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা অক্সালেট জাতীয় খাবার
গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কচুর কাঁচা পাতায় এই বিষাক্ত অক্সালেট এর
পরিমাণ বেশি থাকে, যদিও এর উভয় পাতায় বিষাক্ত। এমনকি কচুর পাতায় অনেক সময় হাত
দিয়ে নাড়াচাড়া করার ফলেও চুলকানি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কচু শাকে কি ভিটামিন আছে
কচু শাকের উপকারিতা প্রকাশ পেয়েছে তার পুষ্টিগুণে। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি সহ আরো বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। যা
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও রাতকানা রোগ
নিরাময়ে অধিক কার্যকরী কচু শাক। প্রিয় পাঠক চলুন জেনে নেই কচুর শাকে কি কি
ভিটামিন আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে রয়েছে ৩৬ ক্যালরি, ২.৬ গ্রাম প্রোটিন, ৩ গ্রাম ফাইবার,
৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৫ গ্রাম ফ্যাট, ভিটামিন বি-৬ ০.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন
কে ৩০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৬০০ আইইউ, ভিটামিন সি 35 মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২৫
মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৫ মিলিগ্রাম।
প্রিয় পাঠক মাত্র ১০০ গ্রাম কচু শাকে রয়েছে এতগুলো পুষ্টিগুণ। কচু শাকের
উপকারিতা অন্যান্য শাকের তুলনায় অনেক বেশি যা আপনারা উপরে কচু শাকের পুষ্টিগুণ
সমূহ দেখে বুঝতে পেরেছেন। তবে কচুশাকে বিদ্যমান অক্সালেট এর জন্য কচু শাকের
অপকারিতা ও লক্ষ্য করা যায়।
কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
কচুর লতির উপকারিতা (khochur loti) হল শরীরের হাড় মজবুত করে এবং যাদের চুল পড়ার
সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চুল পড়া বন্ধ করে। কচুর লতি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যার
কারণে রাতকানা রোগ দূর হয় এবং পরিপাকতন্ত্রে হজমের সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
করে। কচুর লতিতে অধিক পরিমাণে আশ পাওয়া যায় যা খাবার হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও
কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা হল এটি সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
কচু শাক খেলে কি প্রেসার বাড়ে?
কচুর শাকে রয়েছে সব থেকে বেশি পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কচু শাক খেলে কি রক্ত বাড়ে?
কচুর সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও লৌহ পদার্থ যা শরীরের রক্তশূন্যতা দূর
করে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা
দূরীকরণের জন্য ডাক্তার কচুর শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কচু শাক খেলে কি ওজন বাড়ে?
কচুর শাক খেলে ওজন কমে যায়। কারণ কচুরশাকে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে কিন্তু
ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যার ফলে বেশি পরিমাণে কচু খেলে দ্রুত পেট ভরে
যাই, এর ফলে শরীর অল্প পরিমাণে ক্যালরি শোষণ করে। এতে করে শরীরের ওজন কমতে শুরু
করে।
কচু শাকে কত ক্যালরি থাকে?
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে রয়েছে ৩৬ কিলো ক্যালরি শক্তি। তবে কচুর শাকে ক্যালরির
পরিমাণ কম হলেও অন্যান্য ভিটামিন উপাদান অধিক পরিমাণে রয়েছে যার ফলে স্বাস্থ্য
সতেজ থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কচু কিভাবে রান্না করলে গলা চুলকাবে না
কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা পূর্বে ধারণা পেয়েছি। বহুগুনে ভরপুর এই শাক
খেতে গেলে গলা চুলকানোর সমস্যা দেখা যায়। কচুর সাথে রয়েছে বিষাক্ত অক্সালেট।
যার ফলে ্কচুর শাক খাওয়ার সময় গলা চুলকানো ও গলা ব্যথা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আপনি যদি সঠিক নিয়মে কচু শাক রান্না করেন তাহলে গলা চুলকানো সমস্যা আর
থাকবে না। চলুন জেনে নেই কিভাবে কচু শাক রান্না করলে গলা চুলকাবে না-
কচু শাকে বিদ্যমান বিষাক্ত অক্সালেট উচ্চ তাপে নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ কচু রান্না
করার পূর্বে গরম পানিতে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিয়ে সেই পানি ফেলে দিন। এরপরে কচু
পরিষ্কার করে নিয়ে রান্না করুন। দীর্ঘ সময় উচ্চতাপে সংস্পর্শে থাকার ফলে এতে
থাকা অক্সালেট ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে কচু রান্না করলে আর গলা চুলকাবে না।
কচু শাকের উপকারিতা নিয়ে লেখকের মন্তব্য
বহুকাল আগে থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য কচুর শাক
খেয়ে আসছেন। এটি শুধু সবজিই নয় বরং এক ধরনের ভেষজ ঔষধ। কচু শাকের উপকারিতা
প্রকাশ পেয়েছে এর পুষ্টিগুণে ভরপুরের কারণে। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন সি যা রাতকানা রোগ নিরাময় করে।
তবে কচু শাকের অপকারিতা প্রকাশ পেয়েছে এতে থাকা অক্সালেট এর কারণে। কচুপাতায়
বিদ্যমান অক্সালেট অত্যন্ত বিষাক্ত হয়ে থাকে। যার ফলে কিডনিতে পাথর গঠন হতে
পারে। তাই যাদের কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা কচুর পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এছাড়াও এলার্জিজনিত সমস্যা হতে পারে প্রচুর শাক খাওয়ার ফলে তাই একজন ভালো
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
স্বপ্নবোনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url