পাথরকুচি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনিও অবাক হবেন। মূত্রনালীর যে কোন ধরনের সংক্রমণ এবং মূত্র পাথর অপসারণে পাথরকুচি পাতার রস মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও মৃগী রোগীদের ক্ষেত্রে এবং শিশুদের পেটে ব্যথার সমস্যায় পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ানো হয়। এছাড়াও ক্ষত অথবা ব্রণে যদি পাথরকুচির পাতার রস আগুন সেকে লাগানো হয় সেক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়। চলুন তাহলে আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং এর প্রয়োজনীয়তা গুলো কি সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকে যে সকল ভেষজ ঔষধি গাছ চিকিৎসা ক্ষেত্রে জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে এর মধ্যে অন্যতম হলো পাথরকুচি পাতা। এর পাতা মাংসল আকৃতির হয়ে থাকে এবং পাতা মাটিতে পড়ে থাকলে অনায়াসে চারা গজিয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে পাথরকুচির পাতা কিডনির রোগ সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
- কিডনির পাথরপাথরকুচির পাতা কিডনি এবং গলগন্ডের পাথর অপসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর জন্য আপনি প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি পাতা চিবিয়ে খান অথবা রস করে খান।
- পেট ফাঁপাঅনেক সময় দেখা যায় প্রসব আটকে যাওয়ার কারণে অথবা এমনিতেই পে ট ফুলে থাকে সে ক্ষেত্রে একটু চিনির সঙ্গে এক থেকে দুই চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে খেলে সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
- মেহঠান্ডা জনিত কারণে অনেক সময় দেখা যায় শরীরে ফোড়া হয় যাকে মেহ বলা হয়ে থাকে। প্রতিদিন পাথরকুচি পাতার রস খেলে মেহ সমস্যার সমাধান থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- রক্তপিণ্ডঅনেক সময় দেখা যায় পিত্তথলিতে বিভিন্ন কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে সেক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস হতে পারে অন্যতম একটি সমাধান।
- মৃগীমৃগী রোগীদের ক্ষেত্রে দুই থেকে দশ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ালে এই রোগের দ্রুত উপশম হয়।কাটা ছেড়ায়
- পাথরকুচি পাতা কাটা অথবা খেতে যাবে স্থানে আগুনে হালকা শেপ দিয়ে নিয়ে লাগালে আরাম পাওয়া যেতে পারে।
- ত্বকের যত্নেপাথরকুচি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি যা দ্রুত ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করতে সক্ষম। যারা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ তারা পাথরকুচির পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন এক্ষেত্রে ব্রণ সহ ফুসকুড়ি দূর করতে পাথরকুচি পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শিশুদের পেট ব্যথায়যদি আপনি নিশ্চিত হন শিশুর পেটে ব্যথা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে আপনি ৩০ থেকে ৬০ ফোটা পাথর গতি পাতার রস নিয়ে পেটে মালিশ করতে পারেন এতে করে ব্যথা উপশম হতে পারে।
- পায়েলসপাথরকুচি পাতা পাইলস রোগের জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
- জন্ডিস রোগ নিরাময়যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা পাথরকুচি পাতার রস প্রতি নিয়ত খেতে পারেন সে ক্ষেত্রে জন্ডিস রোগ থেকে নিস্তার পেতে পারেন এবং লিভারের সমস্যা চিরতরে বিদায় করতে পারেন।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা পূর্বে জেনেছি। আমরা অনেকেই আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে পাথরকুচির পাতা খেয়ে থাকে কিন্তু পাথরকুচি পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অবগত নয়। মূলত পাথরকুচি পাতার রস দ্রুত রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মূলত এ পাতা মূত্রবাহ রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব অন্য ভূমিকা পালন করে এবং এর ভেষজ অংশটি হলো পাতা। যেকোনো বয়সে হোক না কেন মূত্র রোধে এ ছাড়া ২ চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস খাওয়াই যথেষ্ট। এছাড়াও ডায়াবেটিস আমশায় সহ রক্তপৃত্রে যেকোনো ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে উপরের নিয়মে দুই চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ালে অন্যতম একটি ফলাফল পাওয়া যাবে।
পাথরকুচি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অপরিসীম। যেহেতু এটি আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং স্বাস্থ্য কে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে সেক্ষেত্রে এর যাবতীয় খুঁটিনাটি সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।
বাংলা নামঃ পাথরকুচি
ইংরেজি নামঃ American life plant
বৈজ্ঞানিক নামঃ Kalanchoe pinnata
পরিবারঃ Crassulaceae
পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়
পাথরকুচি পাতার রস খেলে শিশুর পেটে ব্যথা, রক্তপিতে যে কোন সমস্যা, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস নিরাময় সহ শরীরে আরো বিভিন্ন রোগ রয়েছে সেগুলো প্রতিরোধ করে। প্রাচীনকাল থেকে যে সকল ভেষজ ঔষধ পাকাপোক্তভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে জায়গা করে নিয়েছে তার মধ্যে পাথরকুচি পাতা অন্যতম। আর পাথরকুচি পাতার রস খুব দ্রুত আমাদের উপরিক্ত রোগ গুলো থেকে রেহাই পেটে সাহায্য করে। বিশেষ করে মূত্র রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অপরিসীম যার জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর অবদান এখনো বিদ্যমান।
পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুন
পাথরকুচি পাতা পুরনো সর্দি অথবা ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এর জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে দুই চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস হালকা সেঁকে নিয়ে এর সঙ্গে ২৫০ মিলিগ্রাম সোহাগার খই মিশিয়ে খেতে হবে।
এছাড়া শিশুর পেটে ব্যথার ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৬০ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস নিয়ে পেটের উপরে মালিশ করলে ব্যথা কে দ্রুত উপশম করে। আপনি যদি প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি পাথরকুচি পাতার চিবিয়ে নিয়মিত খেতে পারে সেক্ষেত্রে আপনার কিডনির পাথর এবং গলগন্ডের পাথর অপসারণে সাহায্য করে। এছাড়াও পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি চাইলে আপনি সেগুলো দেখে নিতে পারেন।
পাথরকুচি পাতার ব্যবহার
সাধারণত পাথরকুচি পাতা মাটিতে পড়ে থাকলে এর চারা গজিয়ে যায়। তাই বলে একে অবজ্ঞা করা ঠিক নয় এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন চলুন নিচের পাথরকুচি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানি।
- কিডনির পাথর অপসারণ করতে সক্ষম
- শিশুদের পেটে ব্যথা উপশম করে
- মেয়েও অথবা পোড়া রোগের সমাধান দিতে সক্ষম
- শরীর জ্বালাপোড়া সমস্যা থেকে নিস্তার দেয়
- পেট ফাঁপা রোগের নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে
- ত্বকের ক্ষেত্রে ব্রণ এবং ফুসকুড়ি দূর করে
- মৃগী রোগের দ্রুত উপশম করে
- পাইলস এবং জন্ডিস রোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
পাথরকুচি পাতা রোগ নিরাময়িক হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করে তাই একে রোগ নিধনকারী পাতাও বলা হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডক্টর অমিত ভার্মার মতে পাথরকুচির পাতা কিডনির পাথর অপসারণ এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। যদি কেউ জন্ডিস অথবা শ্বেতসার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন পাতা পিষে সকালে খালি পেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এ রোগ শিকড় থেকে নির্মূল হয়ে যাবে। আর এ সকল তথ্য থেকে আমরা বুঝতেই পারি পাথরকুচি পাতার উপকারিতা কতটুকু।
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পকে আমরা পূর্বে জেনেছি। পাথরকুচি পাতার নানাবিধ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতা খাবার ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে এর জন্য নিয়ম অনুসারে পাথরকুচির পাতা গ্রহণ করবেন। আর সবথেকে ভালো মাধ্যম হলো একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পাথরকুচি পাতা অথবা পাথরকুচি পাতার রস খাওয়া।
স্বপ্নবোনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url