গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। আপনি যদি আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সাধন করতে চান এবং ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে চান তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে পালং শাক রাখুন।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পালংশাকের পাশাপাশি আর কোন শাক খেতে পারবেন এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত সে সম্পর্ক বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান সেখানে ক্লিক করুনঃ

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

পালং শাকের চাষঃ মূলত বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ার জন্য শীতের মৌসুমে কৃষকেরা পালং শাক চাষ করে থাকে। এটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে খুব বেশি রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন পড়ে না যার জন্য একে একদম প্রাকৃতিক সবুজ শাক বলা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার না করার ফলে পালং শাকের ভিতরে বিদ্যমান সকল পুষ্টি গুনাগুন সমৃদ্ধ থাকে।

পালং শাক খাওয়ার উপকারিতাঃ মূলত পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল সহ আরো পুষ্টি সমূহ। গর্ভাবস্থায় হবু মা যদি নিয়মিত ডায়েটের সঙ্গে পালং শাক রাখে তাহলে পেটের ভিতর বেড়ে ওঠা বাচ্চার বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মা যদি রক্তস্বল্পতায় ভোগে সেক্ষেত্রে পালংসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পালংশাকে বিদ্যমান মিনারেল ভিটামিন শরীরের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। বাচ্চার মস্তিষ্কের ইমিউনিটি বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিকে আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা শাকসবজি

কাঁচা শাকসবজিঃ গর্ভাবস্থায় যদি কাচা শাকসবজি খাওয়া যায় সেক্ষেত্রে গর্ভে থাকা বাচ্চা এবং আপনার জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ কাঁচা শাকসবজির গায়ে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া লেগে থাকে আর সেগুলো কাচা খাওয়ার ফলে আপনার নানা ধরনের ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। আমরা অনেক শাকসবজি আছে যেগুলো কাঁচা খেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার কারণে সেটি সম্ভব হয়ে পড়ে না। এর জন্য আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসরণ করে কাচা শাকসবজি খেতে পারেন।

কাঁচা শাকসবজি খাওয়ার পূর্বে আপনি সেটি হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কাঁচা শাকসবজির গায়ে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং সে তার সমস্ত কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। কাঁচা শাক-সবজিতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া হালকা গরম পানিতেই মারা যায়।

গর্ভবস্থায় শেষের দিকটা

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় যদি গর্ভে থাকা বাচ্চা এবং মায়ের সঠিক যত্ন না নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে বাচ্চা পুষ্প ভাবে এবং সঠিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। তাই এর জন্য মায়ের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ। কিন্তু সব খাবার গ্রহণ করা ঠিক নয় কারণ কোন খাবার খেলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সেগুলো পরিহার করে চলতে হবে।

আপনি যদি গর্ব অবস্থায় শেষের দিকে খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে বাচ্চা পুষ্ট হবে এবং সঠিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। কিন্তু অবশ্যই আপনার সঠিক খাবার গ্রহণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর জন্য উত্তম পরামর্শ হলো একজন ডাক্তারের সাহায্যে নেওয়া। কারণ তিনি আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সঠিক খাবারের পরামর্শ দিতে সক্ষম।

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

পালং শাক খুবই স্বাস্থ্যসম্মত একটি খাবার এবং এটি প্রতিদিন ডায়েটের সঙ্গে রাখা উচিত। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে পালং শাক বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ের সৃষ্টি করে থাকে তাই অতিরিক্ত পালং শাক গ্রহন থেকে বিরত থাকায় উত্তম। নিচে পালং শাকের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কিডনিতে পাথরঃ পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পিউরেন্স যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ আপনি যখন অতিরিক্ত পরিমাণে পালংশাক গ্রহণ করবেন তখন আপনার শরীরে পিউরিনস এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং শরীরে ইউরিক এসিড অত্যাধিক হারে উৎপন্ন হতে থাকে যার ফলে কিডনিতে পাথর হয়ে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। আপনার শরীরে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে অল্প পরিমাণে পালংশাক পূরণ করুন।
ডায়রিয়াঃ পালং শাক অতিরিক্ত হাই ফাইবার জনিত সবজি হওয়ার কারণে পেটে ব্যথা হয় এবং ডায়রিয়া রোগের সৃষ্টি করে। এছাড়াও অতিরিক্ত পালং শাক গ্রহণের ফলে পেট ফাঁপা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া ক্ষতিকারক

  1. গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
  2. গর্ভাবস্থায় বেশি তেল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
  3. গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ খাওয়া যাবেনা।
  4. গর্ভ অবস্থায় মিষ্টি পরিহার করে চলতে হবে।
  5. গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  6. গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  7. গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  8. গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  9. গর্ভাবস্থায় তেঁতুল ও আঙুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  10. গর্ভকালীন সময়ে খেজুর এড়িয়ে চলুন।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর কিছু খাবারের তালিকা

  1. গর্ভাবস্থায় পাকা পেপে খেতে পারেন।
  2. গর্ভাবস্থায় ডিম খেতে পারবেন কিন্তু ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
  3. গর্ভ অবস্থায় দুধ পান করুন।
  4. গর্ভ অবস্থায় অল্প পরিমানে গরুর মাংস গ্রহণ করুন।
  5. গর্ভাবস্থায় টমেটো ফুলকপি বাঁধাকপি খেতে পারেন।
  6. গর্ভাবস্থায় বড়ই খেতে পারবেন কিন্তু অল্প পরিমানে।
  7. গর্ভাবস্থায় মালটা কমলা খেতে পারবেন।
  8. গর্ভাবস্থায় ডাল খেতে পারবেন
  9. গর্ভাবস্থায় টবেরি খেতে পারবেন।
  10. গর্ভাবস্থায় আমরা খেতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় লাল শাক

লালশাকঃ আপনার শরীরে যদি রক্তশূন্যতা ও হেমিনিয়ার সমস্যা থাকে তাহলে লাল শাক আপনার জন্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি এনে দিতে পারে। এটি পালং শাকের মতোই শীতকালে পাওয়া যায় এবং লালশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বি যার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় লাল শাকের পাতায় পোকার আক্রমণ করে। এই লাল সবগুলো খাওয়া যাবে না আপনি যখন বাজারে যাবেন তখন ছয় থেকে সাতটি পাতাযুক্ত লাল শাক কিনবেন এবং অবশ্যই দেখবেন পাতাগুলো যেন লালচে বরণের হয়। লালচে বর্ণের পাতাতে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। এবং লালশাক কেনার পূর্বে অবশ্যই দেখতে হবে যেন পাতাগুলোতে পোকার আক্রমণ না থাকে।

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক

কলমি শাকঃ কলমি শাক আমাদের দেহের নানা ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। শরীরের বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের কামড় অথবা শরীরের কোথাও লালচে পড়ানো হয়ে গেলে সেখানে সামান্য পরিমাণ আদা বাটার সঙ্গে কলমি শাক বেটে লাগিয়ে দিন। তাহলে দেখবেন জ্বালাপোড়া কমে গিয়েছে। কলমি শাক সাধারণত গ্রামে পুকুরের ধারে অথবা নদীর ধারে বেড়ে ওঠে।

গর্ভাবস্থায় কচুর শাক 

কচুর সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীর শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে প্রচুর শাক খাওয়ানো হয়। এক্ষেত্রে রোগী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। প্রচুর শাক গ্রামে কৃষকেরা তাদের আবাদি জমিতে চাষ করে থাকে অথবা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পুকুরের ধারে এটি বেড়ে ওঠে।

গর্ভাবস্থায় মিষ্টি কুমড়া শাক

মিষ্টি কুমড়াঃ মূলত বছরের তিন থেকে চার বার আমরা পেয়ে থাকি। এটি মূলত গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ প্রচলিত। এদের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যার জন্য এটি খেতে অধিক পরিমাণে সুস্বাদু। মিষ্টি কুমড়ার গাছ লাগানোর পরে এটি যখন সম্পূর্ণরূপে বেড়ে ওঠে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন এটির ডগা থেকে আমরা মিষ্টি কুমড়া শাক পেয়ে থাকি। মিষ্টি কুমড়া ধরার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এর শাক খাওয়া উত্তম।

পালং শাকের জুসের উপকারিতা

পালং শাক একটি গর্ভবতী মায়ের জন্য উপযোগী একটি খাবার। কারণ এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এছাড়াও এটি ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ১০০ গ্রাম পালং শাকের জুস খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের ভিটামিন এর অভাব সম্পূর্ণরূপে চলে যাবে। কিভাবে তৈরি করবেন পালংশাকে জুস সেটা সম্পর্কে জেনে নেই।

প্রথমে ১০ থেকে ১৫ টি পালং শাক ভালোভাবে ধুয়ে নেই। এরপরে সবগুলো ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নেই। এবং অবশ্যই এর সাথে সামান্য পরিমাণে আদা কুচি করে দিতে হবে। ব্লেন্ড হয়ে গেলে এবার একটি ছাকনি দিয়ে একটি গ্লাসে নিন। এরপর এর ভিতরে একটি লেবু দিয়ে প্রতিদিন সকালে খেয়ে নিন। দেখবেন আপনার শরীরের ভিটামিনের অভাব দূর হবে এবং বাচ্চার গ্রুপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

আমাদের শেষ কথাঃ

প্রত্যেকটি ব্যক্তির শরীরের অবস্থা অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তাই শাকসবজি সহ যে সকল খাবার আপনি খান না কেন সবার পূর্বে আপনার একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ একমাত্র তিনি আপনার শরীরের ওজন এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ পরীক্ষা করে তারপরে আপনাকে সঠিক খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিতে সক্ষম।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্বপ্নবোনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url