চিয়া সিড খাওয়ার আশ্চর্য ১০টি উপকারিতা, কতটুকু ও কিভাবে খাবেন।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পূর্বে চিয়া সীড কি সেটি জেনে
নেই। আমরা সকলে জানি চিয়া সিডকে এক ধরনের সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে। মূলত আদিমকাল
থেকেই আমাদের আদিপুরুষেরা চিয়া সিড খেয়ে এসেছে, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন
ও ক্যালসিয়াম। যেহেতু বর্তমান সময়ে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে,
তেমনই প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখার সচেতনতা ও বৃদ্ধি
পেয়েছে। চিয়া সিড কে মূলত আদর্শ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার বলা হয়। আজকে আপনি
আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ
সম্পর্কে জানতে পারবেন।
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান সেখানে ক্লিক করুনঃ
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো রক্তের কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি
কমায়। এছাড়াও চিয়া সিড খাবার ফলে রক্তে ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমে যায়
যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। চিয়া সিড খাওয়ার আরো অনেকগুলো
উপকার রয়েছে যেমন শরীর থেকে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য
করে, গ্যাসের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হয়। এ
ছাড়াও চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা হল ত্বক, নখ ও চুলের যত্নে চিয়া সিড
অনেক উপকারে আসে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
১) চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যার শরীরকে আরো শক্তিশালী
করে ।
২) রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে
কমে যায়।
৩) উচ্চ ফাইবার, প্রোটিন, শর্করা ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪) খাবার খাওয়ার রুচি কমিয়ে দেয় যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
৫) চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ফাইবার অতিরিক্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ
যার ফলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়।
৬) বদহজম থেকে রেহাই দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে। অর্থাৎ
অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যার ক্ষেত্রে উপকারে আসে।
৭) কাজে অধিক মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে।
৮) একটি মুরগির ডিমের তুলনায় চিয়া সিডে তিনগুণ পরিমাণে বেশি প্রোটিন
রয়েছে যার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৯) চিয়া সিড খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা দূর করতে সাহায্য
করে বিশেষ করে এটি আপনার হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য
করে।
১০) কাজ করার পরে সকল ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং ঘুম ভালো হয়।
- চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার যেমন রয়েছে উপকারিতা তেমনি ভাবে চিয়া সিড খাওয়ার অনেক
অপকারিতা রয়েছে। বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের মতে অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়ার
ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে
পেটে ব্যথার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। চিয়া সিডে বিদ্যমান ফাইবার যেমন
শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ঠিক একই ভাবে বেশি পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহণের
ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত চিয়া সিড খাবার
ফলে টন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে
যায়। চিয়া সিড অনেক ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে তাই
চিয়া সিড খাবার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
এছাড়াও গর্ভবতী ও মা হওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী চিয়া সিড খাওয়া প্রয়োজন।
চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সঙ্গে পূর্বে আলোচনা করেছি।
এছাড়াও চিয়া সিড এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। অতিরিক্ত
পরিমাণে চিয়া সিড খেলে ডায়রিয়া বদহজম সহ পেটে গ্যাসের পরিমাণ অনেকাংশে
বেড়ে যায়। এছাড়াও চিয়া সিড মাত্র অতিরিক্ত খাবার ফলে প্রটেস্ট
ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।চিয়া সিড খাবার
ফলে রুচির পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অনেক কমে যায় যার ফলে ওজন হ্রাস পেতে থাকে এবং
শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিয়া
সিড খাওয়া প্রয়োজন।
চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। কারণ খাবার রুচি কমে গেলে আপনি শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়বেন এবং ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যাবেন। এছাড়াও চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তে রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকে। তাই অবশ্যই আপনি একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এবং চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে তারপরেই গ্রহণ করুন।
বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চিয়া সিড অত্যন্ত উপকারী। কারণ চিয়া
সিডে বিদ্যমান ফাইবার, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ব্রেনের কার্যকারিতা
বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও অধিক মনোযোগী করে তোলে।
জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় বাচ্চাদের পেশী গঠনে চিয়া
সিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।চিয়া সিড ছোট বাচ্চাদের
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াও শরীরের চাহিদার ৪২ শতাংশ আয়রন আমরা পেতে
পারি চিয়া সিড থেকে। যা শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য
করেউপকারিতা
কি পরিমানে চিয়া সিড খাবেন
চিয়া সিড মূলত প্রতিদিন এক থেকে দেড় টেবিল চা চামচ খাওয়াই যথেষ্ট। কারণ এতে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ম্যাগনেসিয়াম জিংক ফসফরাস সহ ওমেগা 3 অ্যাসিড।
তবুও শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এর জন্য ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম।
চিয়া সিড কারা খেতে পারবে না?
যাদের রক্তচাপের পরিমাণ অনেকাংশে কম তাদের ক্ষেত্রে চিয়া সিড না খাওয়াই
উত্তম। কারণ নিম্ন রক্তচাপের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে
রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। তাই এড়িয়ে চলায় উত্তম। চিয়া সিড খাওয়ার
ফলে রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে যায় এবং এর সাথে সাথে শর্করার পরিমাণও রক্তে
কমে যেতে থাকে যার ফলে যারা ইনসুলিন গ্রহণ করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত
ধরতে পারে তাই তারা চিয়া সিড খেতে পারবেন না।
আসল চিয়া সিড চেনার উপায়
আসল চিয়া সিড চেনার সর্বোত্তম উপায় হল এটি ঝড়ঝড়া ও অনেক ফ্রেস হয়ে
থাকে। আসল চিয়া সিডের দানা কখনোই একটির সাথে অপরটি লেগে থাকবে না। এছাড়াও
আসল চিয়া সিডে বালির সংমিশ্রণ বা পচা গন্ধ করবে না। কালো চিয়া
সিড মূলত সাদা চিয়া সিড এর তুলনায় দামী হয়ে থাকে।
আমাদের কথা
চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
কারণ এটি শুধু শরীরের জন্য উপকারী নয় বরং কিছু অপকারিতাও রয়েছে। প্রত্যেকটি
মানুষের শরীরের পুষ্টিগুণ চাহিদা আলাদা রকম হয়ে থাকে তাই শরীরের সাথে
সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে চিয়া সিড খাওয়া উচিত। এটি একমাত্র আপনাকে
সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবেন একজন ডাক্তার।
স্বপ্নবোনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url